বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিনে// পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের উদ্যোগে আউশগ্রাম থানার আয়োজনে সচেতনতা শিবির।

রাধামাধব মণ্ডল


২৯ শে জুলাই ভারতীয় নবজাগরণের শ্রেষ্ঠ পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর ১৩২ তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্যের দিনই মাটির কাছে পৌঁছালো আউশগ্রাম থানা। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের উদ্যোগে আউশগ্রাম থানার আয়োজনে আউশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বননবগ্রামের জঙ্গললাগোয়া সিঁদুর ডাঙা আদিবাসী পাড়াতে 'আদিবাসী সমাজের কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে, দ্বিতীয় সচেতনতা শিবিরটি হয়ে গেল শুক্রবারের বৃষ্টি ভেজা বিকালে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আগের যদুগড়িয়ার শিবিরের মতোই এদিনও সিঁদুরডাঙাতে দ্বিতীয় শিবিরটি হয়।
সিঁদুরডাঙার সেই আদিবাসী সমাজের শিবিরের বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের দায়িত্ব প্রাপ্ত ডিএসপি এণ্ড ডিএনটি বীরেন্দ্র পাঠক, আউশগ্রাম থানার আইসি তানাজী  দাস, থানার মেঝবাবু উত্তম পাল প্রমুখ পুলিশ আধিকারিক এবং আউশগ্রাম ১ নং ব্লকের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর আধিকারিক নীলাদ্রি পাল, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ সদস্য সফিউল আলম মণ্ডল ও গুসকরা পৌরসভার কাউন্সিলর সুব্রত শ্যাম।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আউশগ্রাম থানার বননবগ্রাম এলাকার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন গ্রামের আদিবাসীরা। 
অনুষ্ঠানের প্রথমেই বক্তব্য রাখেন আউশগ্রাম থানার আইসি তানাজী দাস। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, 'আদিবাসীদের জন্য এই অ্যাওয়ারনেস অনুষ্ঠান। ডাইনি প্রথাটা থেকে মুক্তি পেতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন।' এরপর বক্তব্য রাখেন নীলাদ্রি পাল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আদিবাসীদের সমাজে এখনও কু-সংস্কারের একটা প্রভাব রয়েছে। ডাইনি ও সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো কুপ্রথা আদিবাসীদের মধ্যে এখনও প্রকোট। বিষধর সাপে কামড়ালে হসপিটালে না নিয়ে গেলে মানুষ বাঁচবে না। কথায় বলে না, ঝড়ে বক মরে; ফকিরের কেরামতি বাড়ে। অনেকেই বলেন, ওঝা বাঁচিয়েছে স্যর। ওটা ঠিক নয়। দেখুন, ওটা বিষহীন সাপ ছিল।'
এরপরই বক্তব্য রাখেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য সফিউল আলম মণ্ডল, 'আদিবাসীদের অভিমুখী করণের এই শিবিরে থাকতে পেরে ভালোলাগে। জ্ঞান দুই ধরণের অপজ্ঞান এবং স্বজ্ঞান। সংস্কার ছেড়ে বেড়িয়ে আসাটাই আলো। ডাইনি এটি একটি অপজ্ঞান। রাঁচির মাণ্ডে গ্রামে পাঁচ মহিলাকে একরাতে খুন হন ডাইনের কুপ্রথাতে। উড়িষ্যাতেও এই রকম ঘটনা ঘটেছে। রাজস্থানেও হয়েছে এই ঘটনা। শিক্ষিত করে তুলতে হবে সমাজকে। কু-সংস্কারের থেকে দূরে থাকুন। তার জন্যই এই শিবির।'
এরপর বক্তব্য রাখতে ওঠেন পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার দায়িত্ব প্রাপ্ত ডিএসপি এণ্ড ডিএনটি তথা সুবক্তা বীরেন্দ্র পাঠক। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, 'আজকে আদিবাসীদের সমাজ থেকেই আমাদের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন লড়াই করে। তাতেও আদিবাসীদের সমাজকে পিছিয়ে পড়া বলতে হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র আদিবাসীদের সমাজেই এই যে কু-সংস্কার আছে তা নয়। কু-সংস্কারের প্রভাব রয়েছে সমাজের সর্বস্তরে। তবে সে গুলো হয়তো তেমন এফেক্টিফ নয়। তাই তেমন সমাজের ক্ষতি করতে পারে না। যেমন বিড়ালে রাস্তাকাটা। তবে আদিবাসীদের সমাজে রয়েছে কয়েকটি কুপ্রথা,  যা এখনও সমাজের ব্যাপক ক্ষতি করে। তেমনই একটি প্রথা ডাইনি এবং অপরটি অসুখ বিসুখে, সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে যাওয়া। এটা করবেন না। আজকাল স্বাস্থ্য সাথীতে ফ্রিতে চিকিৎসা হয়। তেমন কিছু বলে পুলিশ, ডাক্তারদের এবং প্রশাসনের পরামর্শ নিন। ওঝা, গুনিনদের থেকে দূরে থাকুন। তারা কোনোদিনই মানুষের ভালো করেনি। আপনাদের শিক্ষার আলোতে পৌঁছাতে হবে। তাহলেই আপনাদের সমাজ আলোকিত হবে।' স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গলা মাড্ডি নামের একজন বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন কুপ্রথার বিরুদ্ধে।
অনুষ্ঠানের শেষে কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয় সিঁদুরডাঙার মঞ্চেই।